নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:৫৯ এএম, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক শেষ হয় ১৯৮০ সালে। এরপর ২০১৮ সালে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলি খোমেইনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ নিষিদ্ধ করেন। দেশ দুটির দ্বন্দ্বে দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা বিরাজ করছে মধ্যপ্রাচ্যে।
ইরানের খনিজ সম্পদ নিয়ন্ত্রণ, মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা, পারমাণবিক শক্তিমত্তা অর্জনের আকাঙ্ক্ষা, এসব ইস্যুতে দেশ দুটির মধ্যে প্রায় পাঁচ দশক ধরে চলা দ্বন্দ্ব বিশ্বব্যাপী আলোচনা ও ভাবনার উদ্রেক ঘটায় সব সময়।
বিংশ শতকের শুরুর দিকে ইরানের তেল খনিগুলো অ্যাংলো-ইরানিয়ান তেল কোম্পানি নামে একটি ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে ছিলো। ১৯২৫ সালে ব্রিটিশদের সহায়তায় অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রেজা শাহ পাহলভি ইরানের বাদশাহ হিসেবে ক্ষমতা নেন। এরপর ১৯৫১ সালে গণতান্ত্রিক চেহারা রুপ পায় ইরান। ইরানের প্রধানমন্ত্রী হন মোহাম্মদ মোসাদ্দেক, তিনিই তেলক্ষেত্র জাতীয়করণের ঘোষণা দেন।
১৯৫৩ সালের ঘটনা। ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এবং সিআইএ’র সহায়তায় সংঘটিত সামরিক অভ্যুত্থানে মোহাম্মদ মোসাদ্দেক ক্ষমতাচ্যুত হন। যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে পাহলভি আবারও ইরানের বাদশাহ হিসেবে অধিষ্ঠিত হন। ১৯৫৭ সালে ইরানকে পারমাণবিক প্রযুক্তি সহযোগিতার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে চুক্তি হয়। সেসময় তেহরানে ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার সায়েন্স প্রতিষ্ঠা হয়। ১৯৬৪ সালে ইরানের ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনিকে দেশ থেকে বের করে তুরস্কে নির্বাসনে পাঠানো হয়।
১৯৬৭-৬৮ সালে ইরান পারমাণবিক গবেষণায় প্রচুর অগ্রগতি লাভ করে। ইরানকে যুক্তরাষ্ট্র একটি ৫ মেগাওয়াটের রিসার্চ রিঅ্যাক্টর সরবরাহ করে। এর জ্বালানির হিসেবে দেওয়া হয় ৫ কেজির বেশি ইউরেনিয়াম যার ৯৩ শতাংশ পরিশোধিত ছিলো। এরপর, ইরান পারমাণবিক শক্তির বিস্তার নিয়ন্ত্রণ (এনপিটি) চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।
ইরানে ইসলামী বিপ্লব ঘটে১৯৭৯ সালে। শাহ আমলের দুঃশাসন ও দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিয়ে দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভ দমনে হাজার হাজার ইরানিকে হত্যা করে শাহের সৈন্যরা। খোমেনির নেতৃত্বে ১৯৭৯ সালে রেজা শাহ পাহলভির পতন ঘটে। প্রায় ১৪ বছরের নির্বাসিত জীবন ছেড়ে বিপ্লবের নেতা হিসেবে আয়াতুল্লাহ খোমেনির দেশে ফেরা।
১৯৭৯ সালে রেজা শাহ ক্যানসার চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। অত্যাচারী শাহকে পৃষ্ঠপোষকতা করার প্রতিবাদে ও তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার দাবিতে বিপ্লব সফল হওয়ার দুই সপ্তাহ পর তেহরানে মার্কিন দূতাবাসে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা প্রবেশ করে। এক পর্যায়ে ৫২ জনকে জিম্মি করে বিক্ষোভকারীরা। ৪৪৪ দিন পর সেই জিম্মি সংকটের অবসান হয়। সেসময় ইরানের ওপর বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের পাশাপাশি সমস্ত কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে যুক্তরাষ্ট্র।
১৯৮০-৮৮ সালে সংঘটিত হয় ইরাক-ইরান যুদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্রের প্ররোচনায় ইরানের বিপ্লবী সরকারকে উৎখাত করতে যুদ্ধ ঘোষণা করে ইরাক। সীমান্ত বিরোধসহ ইরাকের অভ্যন্তরে শিয়াদের মদত দেওয়ার অভিযোগে ১৯৮০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ইরাকি বাহিনী অবৈধভাবে ইরানকে আক্রমণ করে। সেসময় ইরাকি বিমানবাহিনী ইরানের ১০টি বিমানঘাঁটির উপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়। যুদ্ধে লিপ্ত হয় ইরাক ও ইরান। ৮ বছর ধরে চলা যুদ্ধে ইরাক ও ইরানের ১০ লাখের বেশি মানুষ নিহত হয়, আহত হয় প্রায় ১৫ লাখ।
১৯৮৬ ঘটে কন্ট্রা কেলেঙ্কারির ঘটনা। ইরান-ইরাক যুদ্ধ চলাকালে যুক্তরাষ্ট্র গোপনে ইরানের কাছে অবৈধ অস্ত্র বিক্রি করে এবং তা থেকে প্রাপ্ত অর্থ নিকারাগুয়ার তৎকালীন কমিউনিস্ট সরকার উৎখাতের জন্য কন্ট্রা বিদ্রোহীদের কাছে পাচার করে। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি রোনাল্ড রিগ্যান ও বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ মার্কিন কর্মকর্তা এ কেলেঙ্কারির সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন।
১৯৮৮ সালে পারস্য উপসাগরে ইরান উপকূলের সমুদ্রসীমায় ঢুকে ‘ভিনসেন্স’ নামের মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ইরানের একটি যাত্রীবাহী বিমানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। বিমানটির ২৯৮ জন আরোহীর সবাই নিহত হন।
১৯৯৭ সালে ইরানের কুদস ফোর্সের কমান্ডার হিসেবে কাশেম সোলাইমানি যুক্ত হন। ইরানের বিপ্লবী গার্ডের (আইআরজিসি) কমান্ডার কাশেম সোলাইমানিকে ‘কুদস ফোর্স’র প্রধান বানানো হয়। এই ‘স্পেশাল অপারেশন ইউনিট’র মূল কাজ হচ্ছে ইরানের বাইরে আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার করা। সোলাইমানির নেতৃত্বে সিরিয়া, ইয়েমেন ও লেবানন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে কুদস ফোর্স। হামাস, ইসলামিক জিহাদসহ অসংখ্য গেরিলা দলকে বিভিন্ন সময় সামরিক সহায়তা, প্রশিক্ষণ ও অস্ত্রশস্ত্র প্রদান করে তারা। বাহিনীর কর্মকাণ্ড নিয়ে সোলাইমানিকে জবাবদিহি করতে হয় শুধুমাত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির কাছে।
২০০১ সালে নিউইয়র্কে টুইন টাওয়ার ধ্বংসের পর আফগানিস্তানে তালেবানদের বিরুদ্ধে আমেরিকানদের যুদ্ধে ইরান আমেরিকাকে সহযোগিতা করলেও রাষ্ট্রপতি জর্জ ডব্লু বুশ ইরানকে ‘শয়তানের অক্ষশক্তি’ হিসেবে আখ্যা দেন।
২০০৩ সালের দিকে ইরানের পারমাণবিক হুমকির বিষয়টি নজরে আসে। যুক্তরাষ্ট্র জানায়, ইরান ইউরেনিয়াম উৎপাদনের আড়ালে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে। যদিও ইরান জানায়, তারা ইউরেনিয়াম সংগ্রহ করছে এবং নিজস্ব প্রযুক্তির সাহায্যে জ্বালানি উৎপাদনের দিকে যাচ্ছে। এরপর আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা তেহরানের নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট পরীক্ষা করতে শুরু করলে ইরানের রাষ্ট্রপতি আহমেদিনেজাদ কট্টর অবস্থানে গিয়ে আরও জোরালো করে তুলেন দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচি। ফলে, ইরানের ওপর আমেরিকা ও ইউরোপের নতুন করে নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়।
২০১৩-১৫ সালে ঘটে পারমাণবিক চুক্তিতে স্বাক্ষরের ঘটনা। মধ্যপন্থি হিসেবে পরিচিত হাসান রুহানি ইরানের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জয়লাভ করার পর ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম বন্ধ বা সীমিত করে পশ্চিমের মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ঘোষণা দেন।
২০১৫ সালে ৬ বিশ্ব শক্তির সঙ্গে ইরান তার পরমাণু কর্মসূচি সংক্রান্ত একটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, চীন এবং রাশিয়ার সঙ্গে ইরানের এ চুক্তি হয়। চুক্তির পর ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রক্রিয়া থেকে সরে আসে ইরান। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ইরান সংবেদনশীল পরমাণু গবেষণা সীমিত করতে রাজি হয়। অপরদিকে, দেশটির বিরুদ্ধে আনা অর্থনৈতিক অবরোধ তুলে নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করে দেশ ছয়টি।
২০১৭ সালে ইরানসহ সাতটি মুসলিম দেশের নাগরিকদের জন্য ভিসা বাতিলের ঘোষণা দেয় তখনকার নতুন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প। তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে ইরান আর ডলার ব্যবহার করবে না বলে ঘোষণা দেয়।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর ইরানের সঙ্গে বিশ্বশক্তির পরমাণু চুক্তিতে শর্তের ঘাটতি রয়েছে বলে ঘোষণা দেন। ইরান এখনো মাত্রাতিরিক্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে বলে অভিযোগ তুলে ২০১৮ সালের মে মাসে ট্রাম্প সেই চুক্তি থেকে সরে আসেন।
২০১৯ সালের এপ্রিলে ইরানের কুদস ফোর্সকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে ঘোষণা দেয় আমেরিকা। জবাবে, ইরান অভিযোগ করে, আমেরিকা ‘রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সন্ত্রাসবাদ’ চালাচ্ছে।
২০১৯ সালের জুনের ঘটনা। পারস্য উপসাগরে তেলের ট্যাংকারে হামলা এবং আমেরিকান ড্রোন ভূপাতিত হলে এর দোষ পড়ে ইরানের ওপর। সেসময় ইরানের ওপর আরেক দফা অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে আমেরিকা। ইরান নতুন করে পারমাণবিক কর্মসূচি শুরু করে। সেসময় দেশটির শীর্ষ ব্যক্তিরা চুক্তির কিছু অংশ না মানার ঘোষণা দেয়।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরের ঘটনা। ইরাক ও সিরিয়ায় বিমান হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। সেই হামলায় ইরাকের কয়েকজন শীর্ষ শিয়া মিলিশিয়া কমান্ডার নিহত হন। এ ঘটনায়, বাগদাদে মার্কিন দূতাবাস ঘেরাও করে ইরান-সমর্থিত ইরাকিরা। সেখানে তারা বিক্ষোভ করে, দূতাবাস ভবনে ভাঙচুর চালায়।
২০২০ সালের জানুয়ারির ঘটনা। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্দেশে ইরাকে ড্রোন হামলা চালিয়ে ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও কুদস ফোর্সের প্রধান জেনারেল কাশেম সোলাইমানিকে হত্যা করা হয়। ইরান প্রতিশোধ হিসেবে ইরাকে দুটি মার্কিন বিমানঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। সেদিনই ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিধ্বস্ত হয় ইউক্রেনীয় উড়োজাহাজ। নিহত হয় ১৭৬ জন আরোহী।
২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি ক্ষমতা গ্রহণ করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এরপর থেকেই আবারও উত্তেজনা শুরু হয় দেশ দুটির মধ্যে। পারমাণবিক ইস্যু নিয়ে এখনও বিতর্কের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশ দুটি। দেশ দুটির সম্পর্কের উপর বিশ্বের অনেক কিছুই নির্ভর করছে।
মন্তব্য করুন
যুক্তরাষ্ট্র কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
মন্তব্য করুন
কানাডা প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো
মন্তব্য করুন
হলিউড সিনেমাতে হরহামেশাই আমরা দেখে থাকি, অস্ত্র চালনা কিংবা হ্যান্ড টু হ্যান্ড কমব্যাট, যুদ্ধক্ষেত্রে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রোবট। কখনো মানুষের পক্ষে কখনো মানুষের বিপক্ষে বিরাট রোবট বাহিনী। এবার সিনেমাতে নয়, বাস্তবেই যুদ্ধের ময়দানে দেখা যাচ্ছে রোবট। সিনেমায় দেখানো রোবটের মতো এত উন্নত প্রযুক্তির না হলেও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে দেখা যাচ্ছে কিলার রোবটের ব্যবহার।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অধ্যাপক টোবি ওয়ালশ বলেন, কিলার রোবট শুনলে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির মুভিতে দেখা রোবটের কথা মনে হয়৷ কিন্তু সমস্যা হলো, এগুলো এখন বাস্তবে হচ্ছে৷ এগুলো টার্মিনেটর রোবট নয়৷ এগুলো একধরনের ড্রোন যার ব্যবহার আমরা ইউক্রেন যুদ্ধে দেখতে পাচ্ছি৷ এসব ড্রোনকে মানুষের চেয়ে কম্পিউটার দিয়ে নিয়ন্ত্রণের পরিমাণ বাড়ছে৷
ট্যাঙ্ক, পরিখায় সৈন্য- ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার শুরুতে আমরা এমনটা দেখেছিলাম৷ কিন্তু পরবর্তীতে দুই পক্ষই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার শুরু করে৷ যেমন বায়রাক্তার ড্রোন৷ একেকটির দাম ১১ মিলিয়ন ইউরোর বেশি৷
জার্মান প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. গারি শাল বলেন, ইউক্রেন ও রাশিয়ার কাছে থাকা অনেক অস্ত্রকে পরবর্তীতে এআই-সমৃদ্ধ করা হয়েছে৷ ফলে যুদ্ধে পরিবর্তন এসেছে৷ যেমন রাশিয়াকে আমরা এআই-সমৃদ্ধ গ্লাইড বোমা ব্যবহার করতে দেখেছি৷ আর ইউক্রেনের এআই-সমৃদ্ধ অস্ত্রের মধ্যে আছে ড্রোন৷ যুদ্ধের প্রথম কয়েক মাসে ইউক্রেন যে কার্যকর ও সফল ছিল, তার কারণ ছিল তারা পরিস্থিতি খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছিল৷
সামরিক সংঘাত মানে হলো, তথ্য সংগ্রহ ও সেগুলোর অর্থ বুঝতে পারা৷ কত দ্রুত সেটা করা যাচ্ছে তাও গুরুত্বপূর্ণ৷ এআই সেটা করতে পারে ও সিদ্ধান্ত নিতে পারে৷
মিউনিখের বুন্ডেসভেয়ার ইউনিভার্সিটির আক্সেল শুলটে বলেন, এখন অনেক কিছু স্বয়ংক্রিয় হয়ে যাওয়ায় মানুষ ও যন্ত্রের মধ্যে শ্রম বিভাজন করতে গিয়ে আমাদের সতর্কতার সঙ্গে ভাবতে হবে৷ মানুষের উদ্দেশ্য আছে, যন্ত্রের নেই৷ আমরা এসব যন্ত্রকে, এসব স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থাকে, হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করি৷
কিন্তু ড্রোন কি হিউম্যানয়েড কিলার রোবট বা টার্মিনেটর হতে পারে? আক্সেল শুলটে বলেন, টার্মিনেটর? না সেটা সম্ভব না৷ আমরা এখনো প্রযুক্তিগতভাবে অতদূর এগোইনি৷ হ্যাঁ, ইউটিউবে আমরা বস্টন ডাইনামিক্সের দারুন সব ভিডিও দেখি বটে৷ আমরা দেখি, গতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এসব যন্ত্রের দক্ষতা বেশ ভালো৷ তারা ডিগবাজি বা সে রকম কিছু দিতে পারে৷ কিন্তু এর মানে এই নয় যে, সেগুলো বিপজ্জনক কিলার রোবট হয়ে গেছে৷
২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী সামরিক ব্যয় দুই ট্রিলিয়ন ইউরো ছাড়িয়ে গেছে- যা একটি রেকর্ড৷ ৭৫০ বিলিয়ন ইউরো খরচ করে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র৷ তবে চীনও কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করছে৷ ২০২২ সালে রাশিয়া তার সামরিক বাজেট নয় শতাংশ বাড়িয়েছিল৷
জার্মান প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. গারি শাল বলেন, যদি আপনার এমন বাহিনী থাকে যেটা এআই ব্যবহার করে, তাহলে, অন্য যারা এআই ব্যবহার করে না, তাদের চেয়ে আপনার কৌশল ভিন্ন হবে৷ এটা শুধু যন্ত্রের মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ঢোকানোর বিষয় নয়৷ এটা পুরো ব্যবস্থা পরিবর্তনের বিষয়: প্রশিক্ষণ, কৌশল, সংগঠন সবক্ষেত্রে৷
স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র তৈরিতে কাজ করছে পৃথিবীর প্রায় ৬০টি দেশ। শান্তিপূর্ণ প্রয়োজনে রোবট বানাচ্ছে তারা। তবে এসকল রোবট বা স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের দিকে ঝুঁকলে নিঃসন্দেহে তা হবে ভয়ংকর।
মন্তব্য করুন
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি)তদন্তের বিরোধিতা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে এ আদালতের দেওয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানার সমর্থন করেছে। মস্কো ওয়াশিংটনের এই আচরণকে ‘কপট’ উল্লেখ করে বলেছে, এটি যুক্তরাষ্ট্রের ভণ্ডামি।
আইসিসি যুদ্ধাপরাধের দায়ে ব্যক্তিদের অভিযুক্ত করার পাশাপাশি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও গণহত্যার তদন্ত করতে পারে। গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলা ও সাত মাস ধরে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার তদন্ত করছে সংস্থাটি।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র কারিন জ্যঁ–পিয়েরে গত সোমবার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আইসিসির তদন্ত সমর্থন করে না । এ ছাড়া এই বিষয়ে আদালতের এখতিয়ারের বিষয়টিতেও বিশ্বাস করে না তারা। তবে এর আগে গত বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, পুতিনের বিরুদ্ধে আইসিসির গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির বিষয়টি ছিল ন্যায়সংগত। ইউক্রেনে কথিত রুশ যুদ্ধাপরাধের বিবরণ আইসিসির কাছে তুলে ধরেছে যুক্তরাষ্ট্র।
মস্কো বলেছে, পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতার পরোয়ানা জারি করা পশ্চিমাদের অর্থহীন প্রয়াস। এর মধ্য দিয়ে তারা রাশিয়ার সম্মান নষ্ট করার চেষ্টা করেছে। তারা ইউক্রেনে কোনো যুদ্ধাপরাধ করেনি। তবে ইউক্রেনের দাবি, রাশিয়া যুদ্ধাপরাধ করেছে। রাশিয়া বলেছে, ইউক্রেন যে অপরাধ করেছে, তা এড়িয়ে গেছে পশ্চিমারা। তবে কিয়েভ এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা টেলিগ্রামে করা এক পোস্টে বলেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে আইসিসির দেওয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা পুরোপুরি সমর্থন করে ওয়াশিংটন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এখন তাদের ও তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আইসিসির তদন্তের বৈধতা স্বীকার করতে চাইছে না। জাখারোভা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এমন অবস্থান কপটতার শামিল।
রাশিয়া আইসিসির সদস্যদেশ নয়। ইসরায়েলও এর সদস্য নয়। তবে ২০১৫ সালে ফিলিস্তিন আইসিসির সদস্য হয়। গত শুক্রবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, আইসিসির কোনো সিদ্ধান্ত ইসরায়েলের কার্যক্রমের ওপর প্রভাব ফেলবে না; কিন্তু বিপজ্জনক একটি উদাহরণ তৈরি করবে। ইসরায়েলের কর্মকর্তারা অবশ্য আইসিসির আদেশ নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে। তাঁদের ধারণা, আইসিসির পক্ষ থেকে গাজায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করার অভিযোগে নেতানিয়াহু ও ইসরায়েলে অন্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হতে পারে। একই সঙ্গে হামাস নেতাদের বিরুদ্ধেও এ পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।
মন্তব্য করুন
ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়েসি দ্বীপের কাছে রুয়াং আগ্নেয়গিরি থেকে আবারও অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার ( ৩০ এপ্রিল ) সকাল থেকে আগ্নেয়গিরি থেকে লাভা উদ্গিরণ ও আশপাশে ছাই ছড়িয়ে পরায় স্থানীয় বাসিন্দাদের সর্বোচ্চ সতর্কতা থাকতে বলা হয়।
এদিকে ইন্দোনেশিয়ায় আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের কারণে ছয়টি’রও বেশি বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
জানা গেছে, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ছাই মালয়েশিয়ার বোর্নিও দ্বীপ পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে। সুনামি আশঙ্কায় কর্তৃপক্ষ হাজার হাজার লোককে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে।
আজ বুধবার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মাউন্ট রুয়াং থেকে গতকাল মঙ্গলবার তিন দফা অগ্ন্যুৎপাত হয়েছে। লাভা ও ছাই আকাশের পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে।
কর্তৃপক্ষ ১২ হাজার স্থানীয়কে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ জারি করেছে। অগ্ন্যুৎপাতের পর ছাই ও লাভা সমুদ্রে পড়ার কারণে সুনামির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইন্দোনেশিয়া সুলাওয়েসি দ্বীপ রুয়াং আগ্নেয়গিরি অগ্ন্যুৎপাত
মন্তব্য করুন
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় গত সাড়ে ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে নির্বিচার হামলা ও হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গত এক সপ্তাহ ধরে ব্যাপক ধরপাকড় চালাচ্ছে মার্কিন পুলিশ প্রশাসন। সবশেষ যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং নিউইয়র্কের সিটি কলেজ ক্যাম্পাসে রাতের আঁধারে পরিচালিত হয়েছে পুলিশি অভিযান। এ অভিযানে ক্যাম্পাস দুটি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে শতাধিক ফিলিস্তিন সমর্থকারীকে।
হলিউড সিনেমাতে হরহামেশাই আমরা দেখে থাকি, অস্ত্র চালনা কিংবা হ্যান্ড টু হ্যান্ড কমব্যাট, যুদ্ধক্ষেত্রে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রোবট। কখনো মানুষের পক্ষে কখনো মানুষের বিপক্ষে বিরাট রোবট বাহিনী। এবার সিনেমাতে নয়, বাস্তবেই যুদ্ধের ময়দানে দেখা যাচ্ছে রোবট। সিনেমায় দেখানো রোবটের মতো এত উন্নত প্রযুক্তির না হলেও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে দেখা যাচ্ছে কিলার রোবটের ব্যবহার।